কালোজিরার গুণাগুণ - Sasthokotha


কালোজিরা একটি ওষধি গুন সম্পন্ন উদ্ভিদ দানা। কালোজিরা এর বৈজ্ঞানিক নাম Nigella Sativa. কালোজিরার ওষধিগুন বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমানিত। এটি নিয়মিত সেবনে অনেক ধরনের উপকারিতা পাওয়া যায়। 


কালোজিরা - Sasthokotha  


এই আর্টিকেলে তেমনি কিছু উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

★★ কালোজিরা এন্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুরঃ

কালোজিরায় এমন কিছু রাসায়নিক রয়েছে যা এন্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর। যেমনঃ
-থাইমোকুইনোন
-কার্ভাক্রল
-টি-এনিথল
-৪-টারপিনিওল ইত্যাদি রাসায়নিক পদার্থ থাকে কালোজিরায় যেগুলো এন্টি-অক্সিডেন্টের খুব ভালো উৎস।

এন্টি-অক্সিডেন্টর অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে শরীরে। এটি অনেক ক্রনিক ডিজিজ যেমনঃ ক্যন্সার, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, স্থুলতা প্রতিরোধ করে।

★★ব্যাকটেরিয়া ধ্বংশ করেঃ

কালোজিরার এন্টিবায়োটিক গুন রয়েছে। এটা পরীক্ষা দ্বারা প্রমানিত যে কালোজিরা অনেক ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগের বিরুদ্ধে কাজ করে।
যেমনঃ এটি নিউমোনিয়া, কানের প্রদাহসহ নানা ধরনের ব্যাকটেরিয়াল সংক্রামণের বিরুদ্ধে কাজ করে।

এটি ভালো মানের এন্টিবায়োটিক ওষুধের সমগুন সম্পন্ন।

এক পরীক্ষা থেকে দেখা গেছে যে, এটা সেই সব ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে যে সকল ব্যাকটেরিয়া প্রচলিত এন্টিবায়োটিক ওষুধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী হয়ে উঠে। যেটাকে বলে  drug resistance।
যেমনঃ কালোজিরা methicillin-resistant Staphylococcus aureus (MRSA) নামক ব্যাক্টেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে।

★★ক্যান্সারের বিরুদ্ধে কাজ করেঃ

আমাদের শরীরে বিভিন্ন কারনে ফ্রি-রেডিকেল নামক রাসায়নিক বস্তু তৈরি হয়। এই ফ্রি-রেডিকেল দেহের যে কোন কোষের DNA  এর মধ্যে ক্ষত তৈরি করে। যার ফলে কোষের অস্বাভাবিক বিভাজন শুরু হয় এবং তৈরি হয় ক্যান্সার।

কালো জিরায় অবস্থিত এন্টি-অক্সিডেন্ট এই ক্ষতিকর ফ্রি-রেডিকেলকে ধ্বংস করে দেয়। যার ফলে ক্যান্সারে আক্রন্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।

গবেষণায় দেখা গেছে, কালোজিরায় অবস্থিত থাইমোকুইনোন ক্যান্সার আক্রান্ত কোষকে ধ্বংস করে দিতে পারে।
কালোজিরা ও তার মধ্যে অবস্থিত রাসায়নিক ব্লাড ক্যান্সার, ফুসফুস ক্যান্সার, ব্রেস্ট ক্যান্সার, অগ্নাশয়িক ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সারের কোষকে ধ্বংস করতে পারে।

তাই প্রাকৃতিকভাবে ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে নিয়মিত কালোজিরা সেবন করুন।

★★রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ও প্রদাহ কমায়ঃ

এটি দেহের ইমুউনিটি বা রোগপ্রতিরোধ তন্ত্রকে শক্তিশালী করে তুলে। তাই বিভিন্ন ধরনের সংক্রামক রোগ থেকে রক্ষা করতে পারে।

অন্য দিকে এটি দেহের কোন অংশে ক্রনিক বা দীর্ঘদিনের প্রদাহ তৈরি হলে তা প্রতিরোধ করতে পারে। যেমনঃ গবেষনায় দেখা গেছে, কালোজিরায় অবস্থিত থাইমোকুইনোন রিউমেটিক আর্থাইটিস নামক ক্রনিক প্রদাহ জনিত রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলে।

★★কোলেস্টেরল কমায়ঃ

কোলেস্টেরল এক ধরনের চর্বি।দেহে দুই ধরনের কোলেস্টেরল রয়েছে LDL ও HDL।
গবেষনায় দেখা গেছে নিয়মিত কালোজিরা সেবনে উল্লেখযোগ্য হারে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল  LDL কমে ও উপকারী কোলেস্টেরল  HDL বাড়ে।

LDL হৃদপিন্ডের রক্তনালীতে জমে হার্ট এটাকের করে। তাই হার্ট এটাকের ঝুকি এড়াতে কালোজিরা সেবন করুন।


★★লিভার ভালো রাখেঃ 

আমাদের লিভারে সব ধরনের খাবারের বিপাক ক্রিয়া সংগঠিত হয়। এর ফলে লিভারে নানা ধরনের ক্ষতিকর রাসায়নিক  পদার্থ তৈরি হয়।
বিভিন্ন প্রানীর উপর গবেষণায় দেখা গেছে কালোজিরা লিভারের ক্ষতিকর রাসায়নিক গুলোকে সরিয়ে ফেলে ও লিভারকে রক্ষা করে।

★★ রক্তের শুগার নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ

কালোজিরা নিয়মিত সেবনে রক্তের গ্লুকোজের পরিমান কমে। যার ফলে ডায়াবেটিস এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে দেহ রক্ষা পায়।
কালোজিরা ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়িয়ে দিয়ে রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রনে  ভূমিকা রাখে।

★★পাকস্থলির আলসার প্রতিরোধ করেঃ

পাকস্থলীতে অতিরিক্ত এসিড ক্ষরন হলে পাকস্থলীর মিউকাস মেমব্রেন নামক উপরের প্রলেপ নষ্ট হয়ে যায়। যার ফলে তৈরি পাকস্থলীর আলসার।

কালোজিরায় অবস্থিত নানা ধরনের রাসায়নিক পদার্থ পাকস্থলীর মিউকাস মেমব্রেন পুনর্গঠনে ভূমিকা পালন করে। ফলে আলসার ভালো হয়ে যায়।
তাই গ্যাস্ট্রিক আলসার থেকে মুক্ত থাকতে নিয়মিত কালোজিরা সেবন করুন।

★★ওজন কমায়ঃ

গরম পানি, লেবু, মধুর সাথে কালোজিরা মিশিয়ে নিয়মিত সেবন করলে দেহের অতিরিক্ত ওজন কমে যায়।
এই মিশ্রনটি দেহের মেটাবলিজম বা ক্রিয়া-বিক্রিয়া বাড়িয়ে দেয়। অর্থাৎ দেহের শক্তি খরচের পরিমান বাড়িয়ে দেয়। যার ফলে অতিরিক্ত চর্বি খরচ হয়ে যায় ও ওজন কমে যায়।

★★দাত মজবুত রাখেঃ

কালোজিরার তেল দিয়ে দাতের মাড়ি দৈনিক দুইবার ম্যাসেজ করলে মাড়ির  প্রদাহ, সংক্রামন ও মাড়ির ফুলা কমে যায়।

★★যৌনক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ 

নিয়মিত কালোজিরা ও মধু সেবন করলে নারী ও পুরুষের যোনক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এটি সেক্স হরমোন ক্ষরন বাড়ায়। পুরুষের স্পার্ম উৎপাদন বাড়িয়ে দেয় এবং পুরুষত্বহীনতা প্রতিরোধ করে।

কালোজিরা একটি উতকৃষ্ট ভেষজ উদ্ভিদ দানা। যার উকারিতার শেষ নেই। তাই সুস্থ থাকতে নিয়মিত কালোজিরা সেবন করলে অনেক উপকারিতা পাওয়া যাবে

Post a Comment

0 Comments