উচ্চরক্তচাপ - Sasthokotha |
রক্তচাপ কিঃ
আমাদের দেহের রক্তনালীতে রক্ত প্রবাহিত হওয়ার সময় রক্তনালীর প্রাচীরে যে চাপ প্রয়োগ করে তাকে রক্তচাপ বলে।
রক্তচাপ বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। তবে আমরা সাধারণ সিস্টোলিক(হৃদপিন্ডের সংকোচনের সময়) ও ডায়স্টলিক(হৃদপিন্ড প্রসারনের সময়) রক্ত চাপ পরিমাপ করে থাকি।
স্বাভাবিক রক্তচাপঃ-
সিস্টোলিক রক্তচাপঃ ১০০ - ১৪০ mmHg
ডায়াস্টোলিক রক্তচাপঃ ৬০ - ৯০mmHg
এভারেজ স্বাভাবিক বা আদর্শ রক্তচাপঃ
১২০ (সিস্টলিক)/ ৮০ (ডায়াস্টোলিক) mmHg
উচ্চরক্তচাপঃ
যখন সিস্টোলিক রক্তচাপ ১৪০mmHg এর বেশী ও ডায়াস্টোলিক রিক্তচাপ ৯০mmHg এর বেশী তখন তাকে উচ্চরক্তচাপ বা hypertension বলে।
অর্থাৎ রক্তচাপ ৯০/১৪০ mmHg এর বেশি হলে তাকে উচ্চরক্তচাপ বলে।
উচ্চরক্তচাপের লক্ষণঃ
উচ্চ রক্তচাপের ভয়ংকর দিক হচ্ছে এটি অনেক সময় লক্ষণ বিহীন থাকে। তাই অনেক বুঝতে পারেন না। অন্য কোন কারনে রক্তচাপ মাপতে গিয়ে এইটি ধরা পড়ে।
উচ্চরক্তচাপের নির্দিষ্ট কোন লক্ষণ নেই।তবে অনেক বেশি রক্তচাপের কারনে এই লক্ষণ গুলো দেখা দিতে পারেঃ
★ তীব্র মাথা ব্যাথা।
★অবসাদ লাগা।
★দেখতে সমস্যা হওয়া।
★অনেক সময় বুকে ব্যাথাও হতে পারে।
★শ্বাস নিতে সমস্যা হতে পারে।
★অনিয়মিত হৃদস্পন্দন।
★তীব্র উচ্চরক্তচাপের ক্ষেত্রে পশ্রাবের সাথে রক্ত যেতে পারে।
★ বুক, গলা, কান ভারী অনুভূত হওয়া বা চেপে ধরে আছে বলে অনভূত হওয়া।
এই লক্ষগুলো থাকলে অবশ্যই আপনাকে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। অন্যথায় হার্ট এটাক বা স্ট্রোকের মত রোগের ঝুকি তৈরি হতে পারে।
উচ্চরক্ত চাপের ঝুকির কারনঃ
★ বয়স বাড়ার সাথে উচ্চরক্তচাপের ঝুকি বৃদ্ধি পায়।
★বংশগত কারনে অর্থাৎ আপনার পরিবারের কারো উচ্চরক্তচাপ থাকলে আপনারও উচ্চরক্তচাপের ঝুঁকি রয়েছে।
★ অতিরিক্ত দৈহিক ওজন উচ্চরক্তচাপের অন্যতম কারন।
★কায়িক পরিশ্রম না করা বা অলস জীবন যাপনের কারনে উচ্চরক্তচাপ হতে পারে।
★অতিরিক্ত লবণ খাওয়া।
★বেশি পরিমান পটাশিয়াম যুক্ত লবণ খাওয়া।
★এলকোহল অথবা ধুমপান করা।
★অতিরিক্ত মানসিক চাপ বা দুঃশ্চিন্তা করা।
★কিডনি রোগ, ডায়াবেটিস, স্লিও এপেনিয়া বা নাক ডাকার সমস্যার কারনে উচ্চরক্তচাপ হতে পারে।
উচ্চরক্তচাপের জটিলতাঃ
দীর্ঘদিনের উচ্চরক্তচাপ নিম্নের জটিল রোগগুলো তৈরি করতে পারে।
★হার্ট এটাক।
★ব্রেইন স্ট্রোক।
★উচ্চরক্তচাপ রক্তনালি দুর্বল করে ফেলে। এর ফলে রক্তনালি ফুলে যেতে পারে বা ছিড়ে যেতে পারে। এর ফলে এক ধরনের রক্তনালির রোগ হয় যাকে aneurysm বলে।
★হার্ট ফেইলিউর বা হৃদপিন্ডের পাম্পিং ক্ষমতা কমে যাওয়া।
★কিডনির রক্তনালি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে কিডনির ক্ষতি হতে পারে।
★চোখের রক্তনালি নষ্ট হয়ে দৃষ্টি শক্তি কমে যাওয়া।
★ মস্তিষ্কের রক্তনালি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে স্মৃতিলোপ পাওয়া বা বুদ্ধি বৈকল্যতা দেখা দিতে পারে।
চিকিৎসাঃ
উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে দুই ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।
-ননফার্মাকলজিকাল
-ফার্মাকোলজিকা
ননফার্মাকলজিকাল বা লাইফ স্টাইল মডিফিকেশনঃ
★স্বাস্থকর খাবার খাওয়া।
★লবন খুব কম খাওয়া।
★অতিরিক্ত দৈহিক ওজন কমিয়ে ফেলা।
★নিয়মিত পরিশ্রম বা ব্যয়াম করা।
★এলকোহল ও ধুমপান সম্পূর্ণ পরিহার করা।
ফার্মকলজিকাল বা ওষুধের মাধ্যমে উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রন করাঃ
লাইফ স্টাইল মডিফিকেশনের পাশাপাশি উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে আন্তে ও আদর্শ রক্তচাপ ১২০/৮০ mmHg বজায় রাখার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে হবে।
ডাক্তার প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের ওষুধ দিতে পারে। যেমনঃ
ডাই-ইয়ুরেটিকস-chlorthalidone, hydrochlorothiazide
বিটা-ব্লকার- propanolol, Atenolol
এসিই ইনহিবিটর-lisinopril, benazepril, captopril
ক্যালসিয়াম চেনেল ব্লকার-Amlodipine,nefedipine, diltiazem
ইত্যাদি গ্রুপের ওষুধ উচ্চরক্তচাপ কমানোর জন্য নিয়মিত সেবন করার প্রয়োজন হয়।
পরিশেষে বলা যায়, উচ্চরক্তচাপ দেহের জন্য ঝুকিপূর্ণ একটি বিষয়। তাই এটি কোন জটিলতা তৈরি করার আগে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
0 Comments