কিটো ডায়েট কি?| sasthokotha

কিটো ডায়েট বর্তমান সময়ে খুবই জনপ্রিয়। যারা স্থুলতায় ভুগছে বিশেষ করে তরুন সমাজের কাছে কিটো ডায়েট খুবই আকর্ষনীয়। কারন সবাই খুব দ্রুত ওজন কমাতে চায়।  
keto diet-sasthokotha

কিটো ডায়েট অনুসরণ করে অনেকে মাসে ১৫ কেজির বেশিও ওজন কমানো সম্ভব। কিন্তু কিটো ডায়েট করতে হলে আপনাকে কিটো ডায়েট সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে। কিটো ডায়েটে কি খাবেন, কি খাবেন না এইটা জানা যেমনি জরুরি। তেমনি আপনাকে জানতে হবে কিটো ডায়েট করার ফলে আপনি কি উপকার পাবেন এবং আপনার কি স্বাস্থ্য ঝুকি হতে হতে পারে।

কিটো ডায়েট কি?

কিটো ডায়েট হচ্ছে এমন খাদ্য অভ্যাস যেখানে ফ্যাট বা চর্বি জাতীয় খাবার অধিক থাকবে, অল্প পরিমানে প্রোটিন বা আমিষ থাকবে, কিন্তু শর্করার পরিমাণ একদম কম থাকবে।
অর্থাৎ খাদ্য তালিকা থেকে শর্করা জাতীয় খাবার প্রায় বাদ দিয়ে দেওয়া। ফলে শরীর শক্তির জন্য গ্লুকোজের পরিবর্তে জমে থাকা চর্বি পোড়ানো শুরু করবে।

সাধারণত কিটো ডায়েটে খাবারের শতকরা পরিমাণঃ 

ফ্যাট বা শর্করাঃ ৬০-৭০%
প্রোটিন বা আমিষঃ ১৫-৩০%
কার্ব বা শর্করাঃ ৫-১০%

কার্ব বা শর্করা ২৫-৫০ গ্রামের বেশি নেওয়া হয় না।

কীভাবে ওজন কমায়ঃ

আমাদের ব্রেইন এবং অন্যান্য পেশিগুলো গ্লুকোজ খরচ করে শক্তি উৎপন্ন করে। কিন্তু শর্করা খাবার না খেলে তখন গ্লুকোজের যোগান কমে যাবে। কয়েক দিনের মধ্যে শরীরে জমা থাকা গ্লুকোজ শেষ হয়ে যাবে। তাই লিভার তখন শরীরে জমা থাকা চর্বিকে ভাংতে থাকবে। চর্বিকে ভেংগে কিটোন বডিতে রুপান্তরিত করবে। এই কিটোন বডি থেকে গ্লুকোজ তৈরি হয়ে শরীরে শক্তি উৎপাদন করবে। ফলে শরীরের চর্বি দ্রুত কমবে এবং ওজনও দ্রুত কমবে।

আমরা জানি আমাদের শরীরে একটি গুরুত্বপূর্ণ হরমোন ইনসুলিন। ইনসুলিন রক্তের গ্লুকোজকে চর্বিতে পরিনত করে টিস্যুতে জমা করে।
ইনসুলিন একটি এনাবলিক হরমোন। এটি গ্লুকোজকে চর্বিতে পরিনত করে জমা হতে সাহায্য করে এবং চর্বিকে  ভাংতে বাধা দেয়।

আপনি যখন অধিক শর্করা খাবার খাবেন তখন রক্তে অনেক ইনসুলিন নিঃসরণ হবে, চর্বি জমতে সাহায্য করবে।
কিন্তু যখন স্বাস্থ্যকর ফ্যাট বা চর্বি জাতীয় খাবার খাবেন, শর্করা খুব কম খাবেন তখন রক্তে ইনসুলিন নিঃসরণ কম হবে। চর্বি পোড়ানোর হওয়ার বাধা দূর হবে।

এইভাবে শরীরে জমে থাকা চর্বি ভেংগে কিটোন উৎপাদন হয় এবং ওই কিটোন থেকে গ্লুকোজ উৎপাদন করে শরীর তার নিজের শক্তি জোগায় বলে একে কিটো ডায়েট বলে।   


যে খাবারগুলো খাবেনঃ

★মাংসঃ গরু বা মুরগীর মাংস এক বা দুই টুকরোর বেশি নয়।

★সব ধরনের মাছ

★ডিম

★অলিভ ওয়েল, কোকনাট ওয়েল,
 ক্যানলা ওয়েল

★বাটার, ঘি, বাদাম

★সবুজ যে কোন ধরনের শাক- সবজি। তবে সেটা অলিভ ওয়েল দিয়ে রান্না করতে হবে।

যা খাবেন নাঃ

★মিষ্টি জাতীয় খাবার।

★কোক, ফলের জুস, কেক,আইস্ক্রিম।

★ভাত, রুটি,পাস্তা,নুডলস, ওটস ইত্যাদি কার্ব জাতীয় খাবার।

★সব ধরনের ফল নিষেধ।  কারন ফলে ৫০ গ্রামের বেশি শর্করা থাকে।

★সব ধরনের ডাল। কারন ডালে প্রোটিনের পাশাপাশি প্রচুর শর্করা থাকে।

★সবজীঃ আলু,গাজর মূলা অর্থাৎ মাটির নিচের সবজি নিষেধ।

★ সব ধরনের প্রক্রিয়াজাতকৃত ও ফাস্টফুড জাতীয় খাবার। যেমনঃ বার্গার,পিজ্জা, সেনডুইস।

উপকারিতাঃ

★ খুব দ্রুত শরীরের চর্বি পুড়িয়ে ওজন কমিয়ে ফেলা যায়।

★ রক্তে গ্লুকোজ কমে যায়। তাই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য উপকারী।

★ স্নেহ জাতীয় খাদ্য ক্ষুদা কমিয়ে দেয়।

★ ইপিলেকটিক সিজার বা বাচ্চাদের এক ধরনের খিচুনি রোগের চিকিৎসা হিসেবে এই ডায়েট দারুন কার্যকর।  কারন কিটোন বডি নার্ভে কাজ করে খিচুনি কমায়।

অপকারীতাঃ

★ অনেক দিন ধরে কিটো ডায়েটের ফলে দেহে অতিরিক্ত কিটোন বডি তৈরি করে। যা থেকে দেহে কিটোএসিডোসিস নামক জটিলতা তৈরি হতে পারে। কিটোএসিডোসিস মৃত্যু ঝুকি পর্যন্ত তৈরি করতে পারে।

★ সঠিক নিয়মে পালন করতে না পারলে দেহে নানা ধরনের পুষ্টির ঘাটতি দেখা দিতে পারে। যেমনঃ ভিটামিন, মিনারেল ইত্যাদি। যা থেকে মারাত্মক জটিলতা তৈরি করতে পারে।

★ দীর্ঘমেয়াদি কিটো ডায়েট কিডনিতে পাথর তৈরি হওয়ার ঝুঁকি তৈরি করে। হাড়ের ক্ষয় রোগ অস্টিওপরোসিস হওয়ার ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

★ রক্তে ইউরিক এসিডের পরিমান বাড়িয়ে দিতে পারে। ইউরিক এসিডে দেহের বিভিন্ন হাড়ের জয়েন্টে প্রদাহ ও ব্যাথা তৈরি করতে পারে।

★ চর্বি জাতীয় খাবারের জন্য হৃদরোগের ঝুকি তৈরি করতে পারে।
লিভারের সমস্যা তৈরি হতে পারে।

★ দেহের বিপাক ক্রিয়া ও হজমে সমস্যা করতে পারে। কারন আঁশ জাতীয় খাবার খাওয়া হয় না। তাই কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে।

★ ক্ষুধা, ক্লান্তি, মাথাব্যাথা, খিটখিটে মেজাজ, মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা কমে যাওয়াসহ আরো নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে।

কিটো ডায়েট অনুসরণ করবেন কিনা আর করলে কতদিন করবেন?

শরীরের ক্ষতিকর চর্বি কমানোর জন্য অবশ্যই কিটো ডায়েট অনুসরন করতে পারেন। তবে এইক্ষেত্রে একজন ডায়েটেশিয়ান বা ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন। কিটো ডায়েটের সব নির্দেশনা সম্পূর্ণভাবে অনুসরণ করতে হবে, অন্যথায় শরীরে জটিলতা দেখা দিতে পারে। কিছু নির্দেশনা অনুসরণ করলেন, কিছু নির্দেশনা অনুসরণ করলেননা তাইলে ওজন কমবেনা। উল্টো ওজন বেড়ে যেতে পারে বা শরীরের অন্য সমস্যা দেখা দিবে। খারাপ চর্বি পরিহার করবেন। যেমনঃ সয়াবিন তেল, গরুর মাংসের চর্বি ইত্যাদ পরিহার করবেন।  ভালো ফ্যাট বা চর্বি জাতীয় খাবার গ্রহন করবেন। যেমনঃ বাটার,ঘি, বাদাম ইত্যাদি খাবেন। তাইলে শরীরের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকবেনা।

টানা তিন মাস কিটো ডায়েট করতে পারেন। আশা করা যায় এর মধ্যে কাংখিত ওজন অর্জন হয়ে যাবে। তখন আপনি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাবেন।

কিটো ডায়েট চার্ট সম্পর্কে জানতে ক্লিক করুন

Post a Comment

0 Comments