মানুষের হঠাৎ মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারন হার্ট এটাক। যখন হৃদপিন্ডের নিজের প্রাচীরে রক্ত সরবরাহ বাধা প্রাপ্ত হয় তখন হার্ট এটাক হয়ে থাকে।
হার্ট এটাক। sasthokotha |
হৃদপিন্ডের প্রাচীরের রক্তনালীতে চর্বি, কোলেস্টেরল ও অন্যান্য পদার্থ জমা হয়ে এক ধরনের প্লাক তৈরি করে। এই প্লাক হৃদপিণ্ডের নিজের প্রাচীরে রক্ত প্রবাহ বন্ধ করে দেয়। তখন হৃদপিন্ডের পেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
অনেক সময় এই প্লাক ছিড়ে যেতে পারে ও রক্ত জমাট বেধে রক্তপ্রবাহ বন্ধ হয়ে হৃদপেশি ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। যাকে হার্ট এটাক বলে।
মেডিকেলের ভাষায় যাকে মায়োকার্ডিয়াল ইনফ্রাকশন বা MI বলে।
হৃদরোগের লক্ষণঃ
১. বুক ব্যাথা ও বুকে অসস্থি অনুভব করাঃ
মাঝ বুক বরাবর ব্যাথা থাকবে। বুকে ব্যাথা হার্ট এটাকের প্রধান লক্ষন। ধারালো ছুরির আঘাতের মত তীব্র ব্যাথা অনুভূত হবে।
তবে কিছু রোগী হালকা জ্বালাময় ব্যাথা অনুভব করতে পারে। তবে হার্ট এটাকের প্রধান লক্ষন বুকে ব্যাথা হলেও সব সময় এটি অনুভূত নাও হতে পারে।
বুকে ভারী লাগা, অস্বস্থি, চাপ অনুভূত হতে পারে।
২. শরীরের উর্ধাংশে ব্যাথা ও অস্বস্থিঃ
হার্ট এটাকের ব্যাথা স্নায়ুর মাধ্যমে বুকের উপরের অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
অনেক সময় মুখের চোয়ালে, ঘাড়ে, হাতের উপরের অংশে, পিঠের উপরের অংশে ব্যাথা, অস্বস্তি, চাপ, অসাড়তা বা numbness অনুভূত হতে পারে।
৩. শ্বাসকষ্ট হওয়াঃ
বেশির ভাগ রোগীর হার্ট এটাকের সময় রোগীর শ্বাস নিতে সমস্যা হয়।
শ্বাস কষ্টের সাথে বুকে ব্যাথা থাকতেও পারে নাও থাকতে পারে।
৪. ঠান্ডা ঘাম দেওয়া।
৫. কাশি, বুমি বুমি ভাব অথবা বুমি হতে পারে।
৬. আতংক গ্রস্থ হয়ে যাওয়া। 'জীবন শেষ হয়ে যাচ্ছে' এমন অনুভূতি হওয়া।
৭. অস্থির হয়ে যাওয়া।
চিকিৎসাঃ
যখন একজন মানুষের হঠাৎ এই লক্ষনগুলা দেখা দিবে, তখন তাকে খুব দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। তীব্র হার্ট এটাকের ক্ষেত্রে হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেরি করলে জীবনহানির আশংকা থাকে। তাই হার্ট এটাকের ক্ষেত্রে খুব দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া জীবন রক্ষার জন্য খুব জরুরি।
চিকিৎসক হার্ট এটাক নির্ণয় করার জন্য এই পরিক্ষাগুলো করে থাকেন-
* ECG বা Echocardiogram
* Troponin I enzyme level
* chest x-ray
এর ভিত্তিতে চিকিৎসক ওষুধ দিবেন ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন।
★★এই সময় হার্ট ফেইলিউর ঠেকাতে নিচের ওষুধগুলো ব্যবহৃত হয়ে থাকেঃ
* এসপিরিন (Aspirin), ক্লপিডগ্রেল (clopidogrel)
* Nitroglycerin টেবলেট ও স্প্রে।
* Beta blocker জাতীয় ওষুধ যেমনঃ Aropanolol, Atenolol, Bisoprolol
* ACE inhibitors জাতীয় ওষুধ যেমনঃBenazepril, Captopril, Enalapril, Lisinopril
* statin জাতীয় ওষুধ যেমনঃ atorvastatin, Lovastatin, Rosuvastatin
*Anticoagulants জাতীয় ওষুধ যেমনঃ intravenous or subcutaneous heparin, subcutaneous low molecular weight heparin ইত্যাদি ইঞ্জেকশন হিসেবে দেওয়া হয়।
★★এই ওষুধগুলোর পাশাপাশি ডাক্তার রক্তনালির ব্লক নির্ণয় করার জন্য করোনারি এনজিওগ্রাফি করতে পারেন।
★★ ব্লক হওয়া রক্তনালি চালু রাখতে করোনারি স্টেনটিং করা যেতে পারে। (যেটাকে সাধারণ ভাষায় বুকে রিং পরানো বলা হয়ে থাকে)।
★★ প্রয়োজন অনুসারে ওপেন হার্ট সার্জারির মাধ্যমে CABG বা করোনারি আর্টারি বাইপাস গ্রাফটিং করা হতে পারে পারে।
হার্ট এটাকের ঝুকির কারনঃ
নিচের কারন গুলো হার্ট এটাকের ঝুকি বাড়িয়ে দিতে পারে।
* বয়সঃ
পুরুষের ৪৫ বছরের পর ও মহিলাদের ৫৫ বছরের পর হার্ট এটাকের ঝুকি তৈরি হয়।
* এইজাইনাঃ
হার্টের পেশিতে অক্সিজেন বা রক্ত প্রবাহ কমে গেলে বুকে ব্যাথা হতে পারে।
* ডায়াবেটিস হার্ট এটাকের ঝুকি তৈরি করে।
* ডায়েটঃ বেশি পরিমানে সেচুরেটেড ফ্যাট বা চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহন করা।
* বংশগত কারনে হার্ট এটাকের ঝুকি তৈরি হয় ।
* উচ্চরক্তচাপের কারনে হার্ট এটাকের ঝুকি তৈরি হয়
* অতিরিক্ত ওজন হার্ট এটাকের ঝুকি তৈরি করে।
* ধুমপান হার্ট এটাকের ঝুকি তৈরি করে।
* অতিরিক্ত মানসিক দুঃশ্চিতা ও মানসিক চাপ হার্ট এটাকের ঝুকি তৈরি করে।
* HIV এর কারনে হার্ট এটাক হতে পারে।
হার্ট এটাক প্রতিরোধ করার উপায়ঃ
হার্ট এটাক প্রতিরোধের সবচেয়ে ভালো উপায় হলো স্বাস্থ্যকর জীবন-যাপন করা। যেমনঃ
* ধুমপান না করা।
* স্বাস্থকর ও সুষম খাবার গ্রহন করা।
* পর্যাপ্ত ব্যায়াম করা।
* ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা।
* এলকোহল পান না করা।
* রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখা।
* উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে রাখা।
* ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
* দুঃশ্চিন্তা ও মানষিক চাপ মুক্ত থাকতে হবে।
হৃদরোগ সম্পর্কে আরও জানতে ক্লিক করুন
0 Comments