ডা. জাহাঙ্গীর কবির এর কিটো ডায়েট চার্ট।

যারা দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টার পরও ওজন কমাতে পারেননি তারা কিটো ডায়েট পদ্ধতি অনুসরণ করে বেশ ভালো ফলাফল পেয়েছেন।
কিটো ডায়েট যারা অনুসরণ করবেন তাদের প্রত্যেকটি পরামর্শ  সঠিকভাবে মানতে হবে। ডায়েট চার্ট অনুসারে আপনার খাবার গ্রহন করতে হবে।




সকালের নাস্তাঃ

* সকালে ঘুম থেকে উঠার পর ১কাপ গ্রিন টি পান করতে পারেন। তবে অবশ্যই গ্রিন টি দুধ চিনি ছাড়া পান করতে হবে।

* ১ গ্লাস পানিতে ১ চামুচ আপেল সিডার ভিনেগার উইথ মাদার মিশিয়ে পান করবেন। এতে আপনার বদ হজম কমবে ও চর্বি গলতে সহায়ক হবে।

*  কুসুম গরম পানিতে ১চামুচ লেবুর রস মিশিয়ে খেতে পারেন।

সকালের নাস্তা ৮টার মধ্যে খেতে হবে এবং দুপুরের খাবার ১ঃ৩০ এর মধ্যে খাবেন। কারো দেরিতে নাস্তা খাওয়ার অভ্যাস থাকলে ১১টার মধ্যে উপরের নিয়ম অনুসারে নাস্তা খাবেন আর ৩ টার মধ্যে দুপুরের খাবার খাবেন।

★★ দুপুরের খাবারঃ

* দুপুরের খাবারে শাক-সবজি, মাছ বা মাংস, ঘি দিয়ে ভাজা ডিম, ঘি দিয়ে ভাজা বাদাম, বাটার, শসা- টমেটোর সালাদ খেতে পারেন।

*  শাক সুবজি অবশ্যি এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ ওয়েল দিয়ে রান্না করে খাবেন। মাছও এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ ওয়েল দিয়ে খাবেন। তবে মাছ ডিপ ফ্রাই করা থেকে বিরত থাকুন। হালকা ভেজে খাবেন। এতে মাছের পুষ্টিগুন বজায় থাকবে।সবজিও যতটুকো পারা যায় কম সিদ্ধ করবেন। এতে সবজির পুষ্টিগুন ভালো থাকবে।

*  ডিম মাখন বা ঘি দিয়ে ভেজে খাবেন। একদিনে কুসুমসহ ছয়টা পর্যন্ত ডিম খেতে পারেন। কারন ডিম স্বাস্থ্যকর ফ্যাট ও প্রোটিনের খুব ভালো উৎস। তবে ফ্যাট এডাপটেশন বা শরীর যখন চর্বি খরচ করে শক্তি  উৎপাদন শিখে যাবে তখন ডিমের পরিমান কমিয়ে দিতে হবে।

*  এক বা দুই টুকরা দেশি মুরগীর মাংস অথবা গরুর মাংস গ্রহন করতে পারেন। মাছ অথবা মাংস যে কোন একটা গ্রহন করতে হবে। যারা প্রবাসে আছেন তারা ফার্মের মুরগী এক টুকরো গ্রহন করতে পারেন।


বিকেলের নাস্তাঃ

* বিকেলে ক্ষুধা লাগলে ঘি বা মাখন দিয়ে ভাজা বাদাম গ্রহন করুন। সাথে দুধ-চিনি ছাড়া এক কাপ চা পান করতে পারেন।

রাতের খাবারঃ

* রাত আটটার মধ্যে সকল খাবার খেয়ে নিতে হবে।

* রাতের খাবারের পূর্বেও ১
চামুচ ভিনেগার আর ১ গ্লাস পানি মিশিয়ে পান করুন।

* রাতেও দুপুরের মত খাবার গ্রহন করুন। এক বা দুই আইটেম কম বেশি হতে পারে তাতে সমস্যা নেই।


প্রথম ধাপে উপরিক্ত পদ্ধতিতে  সাত থেকে আট দিন ডায়েট চার্ট অনুসরণ করুন। এই সময়টায় শরীর শিখে যাবে কীভাবে আপনার শরীরের ফ্যাট বা চর্বি খরচ করে শক্তি উৎপন্ন করতে হয়।

দ্বিতীয় ধাপে রোজা রাখা শুরু করুন। সেহরিতে শুধু পানি খাবেন।  রোজার মত করে দিনে পানি বা অন্য কোন খাবার গ্রহন করবেন না।

* ইফতার করবেন শসা, মাখন, বাদাম দিয়ে।  টকযুক্ত ফল খেতে পারেন।

* রাতের খাবারে পূর্বে আপেল সিডার ভিনেগার পান করুন। উপরের নিয়ম অনুসারে রাতের খাবার খাবেন।
তবে রাতের খাবার ইফতারের ১ঘন্টার মধ্যে শেষ করলে ভালো হয়। এরপর পানি পান করতে থাকবেন।

* রোজা শুরু করার পর প্রথম দুই তিন দিন মাথা ঘুরাতে পারে। তাই লবণ মিশ্রিত পানি পান করুন। প্রতিদিন ১টি করে ডাবের পানি পান করবেন।

 * যত বেশি রোজা রাখতে পারবেন তত বেশি ওজন কমবে। তবে সাত দিন পরপর দুই দিন রোজা বিরতি দিবেন।  ওই দুই দিন চার ঘন্টার ব্যবধানে খাবার খাবেন উপরের ম্যানু অনুসারে। বাকি সময় ওয়াটার ফাস্টিং অর্থাৎ ভিনেগার, লেবু, গ্রীন টি, লবন মিশ্রিত পানি এগুলো খাবেন।

* যাদের একটানা রোজা রাখতে সমস্যা হয় তারা সপ্তাহে অন্তত দুইটা রোজা রাখুন। যারা রোজা রাখতে পারবেন না তারা চার ঘন্টার ব্যবধানে উপরের ম্যানু অনুসারে খাবার খাবেন আর বাকি বিশ ঘন্টা ওয়াটার ফাস্টিং করবেন অর্থাৎ ভিনেগার, লেবু, গ্রিন টি, লবন মিশ্রিত পানি এগুলো খাবেন৷


পাশাপাশি যে বিষয়গুলো অবশ্যই মানতে হবেঃ

* রাত দশটা থেকে এগারোটার মধ্যে ঘুমিয়ে যাবেন। কারন দশটা থেকে দুইটা পর্যন্ত প্রচুর গ্রোথ হরমোন নিঃসরণ হয়। গ্রোথ হরমোন ফ্যাট বার্নিং এ খুব ভালো ভূমিকা পালন করে। এই বিষয়টি না মানলে ভালো ফল পাবেন না

* ভোরে ঘুম থেকে উঠুন। তারপর খালিপেটে ৪০ থেকে ৬০ মিনিট হাটুন৷ বয়স্করা ধীরে হাটবেন। কম বয়স্করা দ্রুত হাটবেন বা জগিং করবেন। তবে খেয়াল রাখবেন শ্বাস প্রশ্বাস যেনো স্বাভাবিক থাকে।  ভোরে শরীরের সাথে মানিয়ে হাটুন বা ব্যায়াম করুন। এতে আপনার শরীরের চর্বি কমতে খুব সহায়ক হবে।

* দুঃশ্চিন্তা মুক্ত থাকতে হবে। হাসি খুশি থাকবেন।

* সকালের স্নিগ্ধ রোদ গায়ে লাগান। এতে ভিটামিন-ডি এর ঘাটতি পূরন হবে। যা আপনাকে রোগ মুক্ত রাখবে।

* মুসলমানরা নিয়মিত নামাজ আদায়  করবেন। বেশি বেশি নফল নামাজ আদায় করবেন। এতে আপনার কিছু ব্যায়ামও হলো, মানসিক প্রসান্তিও আসবে।
অন্য ধর্মাবলম্বীরা নিজ নিজ ধর্মের প্রার্থনা করবেন।

* বাইরের খাবার ও প্যাকেটজাত সব খাবার বর্জন করুন। তরকারিতে প্যাকেটজাত মসলা ব্যবহার করবেন না। মস লা কিনা ভাংগিয়ে নিবেন। যারা এক্সট্রা ভার্জিন ওলিভ ওয়েল ব্যবহার করতে পারবেন না তারা মন্দের ভালো হিসেবে সরিষার তেল ব্যবহার করবেন। তবে সেটাও সরিষা কিনে মেশিনে ভাংগিয়ে নিবেন।

এই চার্ট সম্পূর্ণভাবে মানলে আশা করা যায় আপনি কাংখিত লক্ষ্য পোছাতে পারবেন।

কিটো ডায়েটের বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন 

Post a Comment

0 Comments