এজমা বা হাঁপানি কি? এজমা বা হাঁপানির লক্ষণ, নিয়ন্ত্রণের উপায়, চিকিৎসা।


এজমা বা হাঁপানি কি? এজমা বা হাঁপানির লক্ষণ,  প্রকারভেদ, রোগ নির্ণয়, নিয়ন্ত্রণের উপায়, চিকিৎসা। 


এজমা বা হাঁপান। sasthokotha 


এজমা বা হাঁপানি কি?

শ্বসনতন্ত্রের খুব কমন একটি রোগের নাম এজমা। এজমা হচ্ছে শ্বাসনালীর প্রদাহ জনিত একটি অসুখ। যেই প্রদাহের কারনে শ্বাসকষ্ট ও কাশি হয়। রোগী শ্বাস নেওয়ার সময়  wheezing বা শব্দ তৈরি করে ও খুব ঘন ও ছোট শ্বাস নেয়।

যার ফলে এজমার তীব্রতা যখন বাড়ে তখন একজন ব্যাক্তির দৈনিন্দিন কাজ করা দুরুহ হয়ে পড়ে।

সাধারণভাবে আমরা যখন শ্বাস নিই তখন বাতাস মুখ বা নাকের মধ্য দিয়ে ,গলা ও শ্বাসনালির মধ্য দিয়ে ফুসফুসে বাতাস যায়। যখন এই শ্বাসনালীর প্রদাহ তৈরি হবে তখন শ্বাসনালীর প্রাচীরের আবরন বা  lining  স্ফীত হয় ও মিউকাস নামক তরল পদার্থ ক্ষরন করে। মিউকাস শ্বাসনলীর ভিতর বায়ুর প্রবাহ কমিয়ে দেয়। ফুসফুসের ছোট ছোট বায়ূথলিগুলো বায়ূর বদলে মিউকাস দ্বারাপূর্ণ হয়ে যায়।
এই প্রদাহজনিত অবস্থা 'এজমা এটাক' তৈরি করে। যা শ্বাসকষ্ট, কাশি ও শ্বাস নেওয়ার সময় chest tightness বা বুকের দৃড়তার অনুভূতি  তৈরি করে।

এজমার লক্ষনঃ

শ্বাসকষ্ট এজমার প্রধান লক্ষন। ব্যাক্তি ভেদে লক্ষন তারতম্য হতে পারে। কারো এক বা একধিক লক্ষন থাকতে পারে। এজমার সাধারণ লক্ষন গুলো হচ্ছেঃ

★ ছোট ও ঘন ঘন শ্বাস নেওয়া।

★ শ্বাস নেওয়ার সময় wheezing বা Whistling হওয়া অর্থাৎ বিশেষ ধরনের শ্বব্দ হওয়া।

★ কাশি হওয়া। বিশেষ করে রাতে কাশি হতে পারে। হাসলে বা ব্যায়াম করার সময়ও কাশি শুরু হতে পারে।

★ কথা বলতে সমস্যা হওয়া। রোগী শ্বাস্কষ্টের কারনে ঠিকভাবে কথা বলতে পারবে না।

★ শ্বাস নেওয়ার সময় বুকে দৃড়তা অনুভব করা।

★ রোগী দুর্বল হয়ে যাওয়া।

এজমার ট্রিগার বা যা এজমার তীব্রতা বা এজমা এটাক তৈরি করেঃ

বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর পদার্থ যা শ্বাসনালিতে প্রদাহ তৈরি করতে পারে। যার ফলে এজমা এটাক হয় বা এজমার তীব্রতা বাড়ে।যেমনঃ

★ বায়ূবাহিত এলার্জেন। যেমনঃ ফুলের রেনু, ধূলাবালি ইত্যাদি।

★ অনেকের কিছু নির্দিষ্ট খাবারে এলার্জি আছে যা এজমা এটাক তৈরি করতে পারে।

★ শ্বসনতন্ত্রের সংক্রামন। যেমনঃ সাধারণ ঠান্ডাজনিত সংক্রামন বা ইনফ্লুয়েঞ্জার সংক্রামন, নিউমোনিয়া ইত্যাদ।   

★ অনেকের শারিরীক পরিশ্রম বা ব্যায়ামের সময় এজমা এটাক হতে পারে।

★ ঠান্ডা বাতাস এজমা এটাক তৈরি করতে পারে।

★ অনেকের সিগারেটের ধোয়ার কারনে এজমা এটাক হতে পারে।

★ কিছু ওষধের কারনে এজমা এটাক হতে পারে।
যেমনঃ propanolol, aspirin, ibuprofen, naproxen সহ কিছু ওষুধ ব্যাক্তি বিশেষে এলার্জি তৈরি করতে পারে। যা এজমা এটাক তৈরি করে।

★ খুব মানসিক চাপ ও দুঃশ্চিন্তা এজমা এটাক তৈরি করতে পারে।

★ Gastroesophageal reflux disease (GERD) বা বদহজম জনিত  সমস্যার কারনে এজমা এটাক হতে পারে।

এজমার প্রকারভেদঃ

★ এলার্জি জনিত এজমাঃ

 এলার্জেনের (যা এলার্জি তৈ রি করে) কারনে যে এজমার তীব্রতা বাড়ে তাকে এলার্জিক এজমা বলে। যেমনঃ ধুলাবালি, ফুলের রেনু ইত্যাদি এই ধরনের এজমার তীব্রতা বাড়িয়ে দেয়।

★ নন-এলার্জিক এজমাঃ

 যেমনঃ সিগারেটের ধোয়া, জ্বলন্ত কাঠের ছাই যা বাতাসে উড়ে, ঠান্ডা বাতাস, এয়ার ফ্রেশনার ইত্যাদি সরাসরি এলার্জি তৈরি করে না। কিন্তু এইগুলোর কারনে এজমার তীব্রতা বাড়তে পারে। এই ধরনের এজমাকে নন-এলার্জিক এজমা বলে।

★ Occupational বা পেশগত কারনে এজমাঃ
 
কেউ যদি এমন কর্মস্থলে কাজ করেন যেখানে ধূলাবালি, খারাপ গ্যাস, প্রানির প্রোটিন,  বাতাসে কারখানার বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ ইত্যাদি থাকে এবং এইসবের কারনে তার এজমা হতে পারে। যাকে  occupational এজমা বলা হয়।

★ ব্যায়াম জনিত এজমাঃ

অনেকের ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রম এর সময় শ্বাসকষ্ট বা এজমা এটাক হতে পারে। যাকে exercise induced বা ব্যায়াম জনিত এজমা বলা হয়।

★ ওষুধ জনিত এজমাঃ

অনেকের ওষুধের কারনে এজমা এটাক হতে পারে। যেমনঃ এসপিরিন। যাকে drug induced বা ওষুধ জনিত এজমা বলা হয়।

★ Noctuaral বা রাত্রীকালীন এজমাঃ

যে ধরনের এজমায় রাত্রে উপসর্গ বৃদ্ধি পায় তাকে রাত্রিকালীন এজমা বলে।

★ cough varient কাশি প্রধান এজমাঃ

এই ধরনের এজমায় শুধু শুকনো কাশি থাকে। শ্বাসকষ্ট, শ্বাসের সময় শব্দ ইত্যাদি থাকেনা।
এই ধরনের এজমাকে কাশি প্রধান এজমা বলা হয়।

রোগ নির্ণয়ঃ

★ রোগ নির্ণয় করতে চিকিৎসক আপনার কাছ থেকে রোগের ইতিহাস জানতে চাইবেন। যেমনঃ কত দিন ধরে শ্বাসকষ্ট বা কাশি, কখন বাড়ে, ধূলাবালি, খাবার বা অন্য কোন কারনে বাড়ে কিনা। পরিবারে এমন কারো শ্বাসকষ্টের ইতিহাস আছে কিনা। এই তথ্যগুলো দিয়ে একজন চিকিৎসক বুঝতে পারবেন এজমা কিনা।

★ চিকিৎসক স্টেথোস্কোপ দিয়ে আপনার শ্বাসের শব্দ শুনে নির্ণয় করতে পারবেন।

★ Pulmonary function test বা ফুসফুসের কার্যকারিতা পরীক্ষাঃ-
 যেমন- spirometry. এই পরীক্ষায় রোগীকে একটি ডিভাইসে ফু দিতে বলা হয়। যা দ্বারা তার ফুসফুসের বায়ূর আদান প্রদান মাপা হয় এবং এটি দ্বারা এজমা নির্ণয় করা যায়।

★ এলার্জি পরীক্ষাঃ স্কিন বা রক্তের পরীক্ষার মাধ্যমে এলার্জিক সমস্যা আছে কিনা নির্নয় করে এজমা নির্ণয় করা যায়।

★ কাশি পরীক্ষাঃ কাশি পরীক্ষা করে বুঝা যেতে পারে। কারন এজমায় কাশির সাথে ইওসিনোফিল পাওয়া যায়।

★ চেস্ট এক্স-রে করা হতে পারে।

এজমা কি ভালো হয়?

না। এজমা পুরোপুরি ভালো হয় না। তবে এজমা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। ডাক্তারের পরামর্শে নিয়মিত ওষুধ ও কিছু নিয়ম মেনে চললে এজমা নিয়ন্ত্রণে রেখে সুস্থ জীবন-যাপন করা যায়।


এজমার নিয়ন্ত্রণের উপায় ও চিকিৎসাঃ

★ চিকিৎসক আপনাকে ওষুধসহ কিছু নিয়ম কানুন মেনে চলতে বলবে। যা অবশ্যই মানতে হবে।

★ শ্বাসনালির সংক্রামন ঠেকাতে ইনফ্লুয়েঞ্জা ও নিউমোনিয়ার  ভেক্সিন বা টিকা নিন।

★ আপনার এজমার ট্রিগার (যে গুলোর কারনে এজমা বাড়ে) নির্ণয় করুন এবং ওই ট্রিগার এড়িয়ে চলুন।

★ শ্বাসপ্রশ্বাস মনিটরিং করুন। কোন উপসর্গ দেখা দিলে ওষুধ সেবন করুন ও ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন। উপসর্গ কম থাকতে চিকিৎসা নিন।

★ নিয়মিত ওষুধ সেবন করুন। উপসর্গ দেখা দিলে, তাড়াতাড়ি উপসর্গ কমাতে  ইনহেলার ব্যাবহার করুন।

★ এজমার ওষুধঃ
-  corticosteroid
- montilukast
- sulbutamol
- iptratropium
- theophyline
- inhaler:-
  corticosteroid inhaler
  corticosteroid+sulbutamol ইনহালের

এই নিয়ম ও ওষুধ সেবনের মাধ্যমে আপনি এজমা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন। 

Post a Comment

0 Comments