ডায়াবেটিস কি?
আমাদের শরীরের বিভিন্ন কোষে শক্তি জোগায় গ্লুকোজ। রক্ত বিভিন্ন কোষে এই গ্লুকোজ পরিবহন করে। রক্তে গ্লুকোজ ১টা নির্দিষ্ট পরিমানের বেশী থাকতে পারেনা।
যখন রক্তে গুকোজ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পরিমানে থাকে তখন তাকে ডায়াবেটিস বলে।
রক্তে গ্লুকজের স্বাভাবিক মাত্রাঃ
খালি পেটেঃ ৩.৫ থেকে৫.৫mmol/L
খাবার খাওয়ার ২ঘন্টা পরঃ ৭.৮ এর কম
রক্তে গ্লুকোজ কত হলে তাকে ডায়াবেটিস বলেঃ
যখন খালি পেটে ৭.১ এর বেশি ও খাওয়ার ২ঘন্টা পর ১১ এর বেশি তখন ক্লিনিক্যালি তাকে ডায়াবেটিস বলে।
ডায়াবেটিস কীভাবে হয়?
আমরা জানি আমাদের শরীরের বিভিন্ন বিপাক ক্রিয়ায় নানা ধরনের হরমোন কাজ করে।
তেমনি ১টি গুরুত্বপূর্ণ পূর্ণ হরমোন হলো ইনসুলিন। আমাদের উদরের উপরের দিকে অগ্নাশয় নামক একটি অংগ আছে। যেটার কাজ ইনসুলিনসহ অন্যান্য হরমোন ক্ষরন করা।এই ইনসুলিনের প্রধান কাজ রক্তের গ্লুকোজ কমিয়ে দেয়া।
আমরা প্রতিনিয়ত প্রয়োজনের অতিরিক্ত ভাতসহ অন্যান্য শর্করা খাবার খাই। যার ফলে আমদের রক্তের গ্লুকোজ বেড়ে যায়। ইনসুলিন ওই গ্লুকোজকে রক্ত থেকে সরিয়ে লিভারে নিয়ে যায় ও জমা করে রাখে। ফলে আমাদের রক্তের গ্লুকোজের স্বাভাবিক মাত্রা বজায় থাকে।
কোন কারনে যদি ইনসুলিন তৈরি না হলে অথবা কাজ করতে না পারলে তখন রক্তের গ্লুকোজ বেড়ে যায় ও ডায়াবেটিস হয়।
ডায়াবেটিসের প্রকারভেদঃ
১. টাইপ ১ ডায়াবেটিস
২. টাইপ ২ ডায়াবেটিস
৩. গর্ভকালীন ডায়াবেটিস
ডায়াবেটিসের কারনঃ
১.টাইপ ১ঃ যদি কোন কারনে দেহে ইনসুলিন তৈরি না হয় তখন টাইপ ১ ডায়াবেটিস হয়। সাধারণত ৩০ বছরের কম বয়সীদের এই ধরনের ডায়াবেটিস হয়ে থাকে।
২. টাইপ ২ঃ দেহে ইনসুলিনের স্বাভাবিক ভাবে তৈরি হয়। কিন্তু ইনসুলিন কাজ করতে পারেনা। তখন তাকে টাইপ২ ডায়াবেটিস বলা হয়। সাধারণত ৩০ বছরের বেশি বয়সের মানুষের এই ধরনের ডায়াবেটিস হয়। যাদের ওজন বেশি, কায়িক পরিশ্রম করেনা তাদেএ এই ধরনের ডায়াবেটিসের ঝুকি বেশি থাকে। খাদ্য অভ্যাস এই ধরনের ডায়াবেটিসের বড় একটই কারন।
৩. গর্ভকালীন ডায়াবেটিসঃ গর্ভকালীন সময়ে রক্তের গ্লুকোজ বেড়ে যেতে পারে। বিভিন্ন হরমোন ঘটিত কারনে এই ধরনের ডায়াবেটিস হয়ে থাকতে পারে। এটি গর্ভবতী মা ও শিশি উভয়ের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ।
অন্যান্য কারনঃ
*অগ্নশয়ের কোন রোগ থাকলে যেমনঃ অগ্নাশয় ক্যন্সার।
* বংশগত কারনে ইনুলিন কম তৈরি হওয়া ও কাজ না করতে পারা।
* বিভিন্ন ওষুধ রক্তের গ্লুকোজ বাড়িয়ে দিতে পারে।
কারা ডায়বেটিসের ঝুকিতে আছেনঃ
১. যারা শারীরিক পরিশ্রম করেন না। নিয়মিত ব্যায়াম করেন না। বেশিরভাগ সুময় শুয়ে বসে থাকেন।
২.খাদ্যাভ্যাস একটই বড় কারন। প্রয়োজনের তুলনায় বেশি খাবার খায় যারা এবং বিভিন্ন ধরনের উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার খেয়ে থাকেন।
৩. যাদের ওজন বেশি। বিএমএ- ২৫ এর বেশি।
৪. যাদের বংশের কেউ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত।
৫. যারা অনেক দিন ধরে কর্টিসল জাতীয় ওষুধ খেয়ে থাকেন।
৬. যাদের রক্তে কলেস্টেরলের মাত্রা বেশি।
৭. যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে।
ডায়াবেটিসের লক্ষন সমুহঃ
ডায়াবেটিস রোগীদের শরীরে নানা ধরনের লক্ষন দেখা দেয়।
-ঘন ঘন পশ্রাব হওয়া
-ঘন ঘন পানির পিপাসা লাগা
-দুর্বল লাগা
-বেশি বেশি ক্ষুধা লাগা
- অনেক খাওয়া সত্বেও ওজন কমে যাওয়া।
-কোন ইনজুরি বা অপারেশনের পর ক্ষত শুকাতে অনেক দেরি হওয়া।
-দৃষ্টি শক্তি কমে যাওয়া।
-সব সময় ক্লান্ত লাগা
যেভাবে রোগ নির্ণয় করা হয়ঃ
১. রেনডম ব্লাড সুগার (RBS)
২. ওরাল গ্লুকোজ টলারেন্স টেস্ট(OGTT)
এই পরীক্ষা গুলোর মাধ্যমে ডায়াবেটিস শনাক্ত করা হয়ে থাকে। খালি পেটে ৭.১mmol/L এর বেশি হলে ও ভরা পেটে ১১mmol/L এর বেশি হলে ডায়াবেটিস শনাক্ত হয়।
প্রতিকারঃ
১. নিয়ম মেনে খাবার খাওয়া। অতিরিক্ত শর্করা জাতীয় খাবার খাওয়া যাবে না। খাবার চার্ট মেনে অবশ্যই চলতে হবে।
চিনি ও মিষ্টি জাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে। সম্পৃক্ত ফ্যাট জাতীয় খাবার খাওয়া যাবেনা। যেমনঃ গরুর মাংসের চর্বি। অসম্পৃক্ত ফ্যাট খাওয়া যাবে। যেমনঃ মাছ।
আঁশ জাতীয় খাবার বেশি খেতে হবে। শাক সবজি, ফলমূল বেশি বেশি খেতে হবে।
যেসব খাবারে ক্যালরি বেশি সেসব খাবার বাদ দিতে হবে।
২.নিয়মিত কায়িক শ্রম ও ব্যায়াম করতে হবে। প্রতিদিন নিয়ম মেনে হাটার বিকল্প নেই। এটি খুব কার্যকর।এতে ইনসুলিনের কর্ম ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। অন্তত দিনে ৩০ মিনিট হলেও হাটা প্রয়োজন।
৩.ওষুধ সেবন করতে হবে।
টাইপ-১ এর ক্ষেত্রে ইনসুলিন ইঞ্জেকশন নিতে হয় চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী।
টাইপ-২ এর ক্ষেত্রে মুখে ওষুধ খেতে হয়। যেগুলোকে oral hyperglycemic agent বলা হয়ে থাকে। প্রয়োজন হলে চিকিৎসক ইনসুলিনও দিতে পারেন।
৪. একজন রোগীর ডায়াবেটিস সম্পর্কে ভালোভাবে ধারণা থাকতে হবে। ডায়াবেটিস সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকলেই সম্ভব ডায়াবেটিস প্রতিকার করা। নিকট আত্মীয়রাও এই সম্পর্কে জ্ঞান রাখতে হবে।
কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করুন।
1 Comments
This comment has been removed by the author.
ReplyDelete